২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এবং সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে রাশিয়ার প্রভাব ছিল বলে নানা মহলে আলোচনা হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে গত নির্বাচনে ভোটারদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়েছে রাশিয়া।

এর প্রমাণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্পের নির্বাচনী টিমের সাথে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক, হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনী প্রচারণায় সাইবার হামলা, বিভিন্ন রাজ্যের ভোটারদের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ এবং অনলাইনে এমন সব ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কথা যেগুলো নাকি শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে গেছে।
“মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত এই সেই স্লোগান অনুসারে ক্রেমলিন কি এবারও চেষ্টা করবে আমেরিকাকে একটি “অসাধারণ রাষ্ট্র” হিসেবে ধরে রাখতে?
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী তেসরা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা, দুই প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মাথায়।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এরই মধ্যে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন: নির্বাচনে রাশিয়ার দিক থেকে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেনেটে রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেলও এমনই মতামত দিয়েছে। রাশিয়া যে গতবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিল তাদের মতামত এই ধারণাকেই আরো বেশি সমর্থন দিয়েছে।
এই প্যানেল মতে, ট্রাম্পের প্রচারণায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপ খুব সহজ ছিল। তবে এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় তারা কোন অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র দেখতে পাননি।
২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের জায়গায় এবার জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা তার পর্যালোচনায় বলেছেন, “প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মানহানি করার জন্য রাশিয়া নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।”
আরো এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর পরিচালক ক্রিস্টোফার রে-এর অভিমত হচ্ছে রাশিয়া কখনোই এই তৎপরতা বন্ধ করেনি।
ক্রিস্টোফার রে মনে করেন, ২০১৮ সালের কংগ্রেস নির্বাচনেও রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছে। এবং সেটাকে তারা নিয়েছে “২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি মহড়া” হিসেবে।
তবে বিদেশি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছিন, “এধরনের অভিযোগ আনা মানসিক বৈকল্য এবং এর সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাশিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে দেখতে চায় কীনা সেটি একটি প্রশ্ন। কিন্তু তাদের আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা।
যেমন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া এই জোটকে মহামারি মোকাবেলার বিষয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
রাশিয়া অবশ্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে রাশিয়া যদি হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে তাহলে “এর মূল্য দিতে হবে।” শুধু তাই নয়, রাশিয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের “প্রতিপক্ষ” বলেও উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবসময়ই তাকে খাটো করে দেখেছেন। তবে এবিষয়ে তার নিজের গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের সাথেও মাঝে মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের পর ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি কি মার্কিন গোয়েন্দাদের নাকি মি. পুতিনের দাবী বিশ্বাস করেন? জবাবে ট্রাম্পের উত্তর ছিল: “প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন রাশিয়া কিছু করেনি। তারা কেন সেটা করবে আমি তার কোন কারণ দেখি না।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য পরে বলেছেন যে তিনি ভুল বলেছিলেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।