ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অনলাইনে ডিএসইর সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বর্তমান কমিশনের মাত্র ৪ মাস সময় হলেও এরই মধ্যে বেশ কিছু পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে৷ যার ফলাফল আপনারা ইতিমধ্যে দেখতে শুরু করেছেন৷ পুনর্গঠনের সকল কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে বর্তমান কমিশনের মেয়াদের দুই বছরের মধ্যেই একটি আধুনিক পুঁজিবাজার দেখা যাবে।

গতকাল ৬ অক্টোবর বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ডিজিটাল প্লাটফর্মে ‘Dealing with investors’ শীর্ষক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম প্রধান অতিথী হিসেবে অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, বাজারে ত্রুটি থাকলে বিএসইসি সেটা ধরে সংশোধনের কাজ করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন সেক্টরের দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও কমার বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাদের ফোন করেন, ফেসবুকে লেখেন, ই-মেইল করেন, চিঠি লেখেন। জানতে চান, এই সেক্টর কেন বাড়ছে, ওই সেক্টর কেন কমছে। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি কেনা-বেচার দিকে নজর দিতে যাই তাহলে বাজারে বিনিয়োগ করে শান্তি পাওয়া যাবে না৷

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ৪ মাস গেছে। বর্তমানে বাজারে এক হাজার কোটি টাকার আশেপাশে লেনদেন হচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উত্তীর্ণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে। তিন বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটি বাজার আমরা উপহার দেবো৷
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার টিকে থাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য। তারা এখানে বিনিয়োগ করেন বলেই বিভিন্ন কোম্পানি এখান থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ পায়। এবং সেই অর্থ দিয়ে শিল্পায়ন হয়। এতে কোম্পানি যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছে। সর্বোপরি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দরকার৷ যারা আমাদের উপর আস্থা রেখে এখানে বিনিয়োগ করছেন তাদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি৷

অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, আজকের অনুষ্ঠান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের যারা বিনিয়োগকারী তারা ব্যবসায়ের ভাষায় কাস্টমার, বিনিয়োগকারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। কাস্টমারের কথা এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে যে যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কথা শুনছেন। যখন মনে হবে যে কোন ভুল হয়েছে তখন কাস্টমারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। তাদের প্রয়োজনটা বুঝতে হবে এবং সমাধান দিতে হবে, কাস্টমার যখন দুঃখ কষ্ট নিয়ে আসবে, তাদের দুঃখ কষ্ট বুঝতে হবে।

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, ট্রেকহোল্ডার সবারই দায়িত্ব আছে। সবাইকে বিনিয়োগকারীদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। কাস্টমার/বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টি অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল ডিভিশনের সাথে সমন্বয় করে কমিটি নতুন করে তৈরী করা যেতে পারে। প্রতি মাসে সেই কমিটি একবার বৈঠক করতে পারে। বিদেশি কোম্পানি দেশে ব্যবসা করতে আসলে স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হতে হবে। এরকম একটা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, বাজার ভালো করার জন্য শতভাগের ৫০ ভাগই গভর্নেন্স এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। খারাপ কাজ করলে তার শাস্তি পেতে হবে। ভালো কাজ করলে তার জন্য ধন্যবাদ পেলেই বাজার ভালো হবে।

তিনি আরো বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসতে চাইলে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেখছি। এর আগে ৪০ বছর শুধু স্বপ্নই দেখেছি। এই কমিশনের নেতৃত্বে আমি অভিভূত। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ বাজারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তারা মাত্র ৪ মাসেই বাজারের জন্য অনেক ভূমিকা রেখেছেন। তবে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এগুলো সমাধানে তাদেরকে কিছুটা সময় দিতে হবে।

তিনি বলেন, শেষ ২ কার্যদিবস সূচক কমেছে। কিন্তু লেনদেন বেড়েছে। এটাই বাজার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এমনটি হয়। এখন কমতি দরে বিনিয়োগকারীরা ক্রয় বাড়িয়েছেন। তবে এর আগে কৃত্রিমভাবে সূচক উঠানো-নামানোর কাজ করা হতো।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে দেওয়ার জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে আহবান করেছেন রকিবুর রহমান। এছাড়া লেনদেন টি+১ এ আনার আহবান করেছেন। এতে করে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আইপিও আসলে বাজার ধীরগতি হয়ে যায় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু এটা ঠিক না। আপনার হাতে যদি ভালো শেয়ার থাকে, তাহলে কেনো আপনি ওই শেয়ার বিক্রি করে আইপিওতে যাবেন।
তার আগে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

স্বাগত বক্তাব্যে তিনি বলেন, বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়কারী ও তাদের বৈশ্বিক মান নিরুপণকারী প্রতিষ্ঠান IOSCO ৫-১১ অক্টোবর ২০২০ তারিখ বিশ্বের সকল সাধারণ বিনিয়োগকারীগনের জন্য “বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০’ কর্মসূচি ঘোষণা করে৷ বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষার গুরুত্ব এবং বিনিয়োগকারী সচেতনতা ও শিক্ষা বিষয়ে সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রকদের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগকে তুলে ধরার মাধ্যমে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই “বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০’’ এর মূল উদ্দেশ্য।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উদ্যোগে তৃতীয় বারের মত ৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীর স্বতফূর্ত অংশগ্রহণে “বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০” এর শুভ উদ্বোধন সূচিত হয়৷ বিএসইসি’র চেয়ারম্যান মহোদয়- ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০” উদ্বোধন করেন৷

তিনি আরও বলেন, কার্যকরি বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে বিনিয়োগকারীগণকে বিনিয়োগের সাথে ঝুঁকির মাএার উপর জোর দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশেও “বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০” উদযাপিত হচ্ছে। বিএসইসি’র এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০ এর উদ্দেশ্য হলো, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের যথাযথ অংশগ্রহণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তোলা৷

পুঁজিবাজারের মূল চালিকাশক্তি হলো বিনিয়োগকারী; বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শেয়ারবাজারে গতিশীলতা আসবে না৷ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্তের হাত থেকে রক্ষা করতে এ কর্মসূচি৷ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার সর্বপ্রথম উপাদান বিনিয়োগ শিক্ষা। আর এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কার্যক্রমের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপে ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন পর বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ বিএসইসি কর্তৃক বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আগামীতে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ও গভীরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে একযোগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সচেতনতায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে। একটি শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী তৈরিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বদ্ধ পরিকর।

পরে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসনে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলী লিসে্টড কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ, মেট্রোপলিট্রন চে্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাসি্ট্রজ এর প্রেসিডেন্ট মিস নিহাদ কবির এবং ডিএসই’র পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী।​ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পাটওয়ারী, এফসিএমএ।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন