চীন-মার্কিন ক্রমবর্ধমান বৈরিতার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া লাখ লাখ চীনা শিক্ষার্থীকে। মার্কিন বিমানবন্দরগুলোতে এখন চীন থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সন্দেহভাজন প্রযুক্তি পাচারকারি হিসাবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশে ফেরার সময় তাদের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর বিবিসির।
চীনা সরকারি বৃত্তি নিয়ে গবেষণা করতে আসা ১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে চুক্তি গত সপ্তাহে মাঝপথে বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন চীনা শিক্ষার্থী কিথ ঝাং (ছদ্মনাম)। ওয়াশিংটনে বিবিসি-র চীনা সার্ভিসের সংবাদদাতা ঝাও ইন ফেং-এর কাছে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি।

বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঝাং। তাকে হঠাৎ বোর্ডিং ডেস্কে তলব করা হলে তিনি ভেবেছিলেন রুটিন নিরাপত্তার জন্যেই ডাকা হচ্ছে তাকে। কিন্তু গিয়ে দেখলেন দুজন সশস্ত্র সীমান্ত এজেন্ট পুলিশ তার জন্য অপেক্ষা করছে। দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। তার কথায়, ‘তারা আমাকে এমনভাবে জেরা শুরু করলো যেন আমি যেন আমি প্রযুক্তি চুরি করতেই আমেরিকাতে পড়তে এসেছিলাম’।
২৬ বছর-বয়স্ক পিএইচডি ছাত্র ঝাং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে এক বছরের জন্য একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করতে এসেছিলেন। দেশে ফেরার আগে দু’ঘণ্টা ধরে তাকে যেভাবে জেরার মুখোমুখি হতে হয় তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। মার্কিন পুলিশ বের করার চেষ্টা করছিল তার সঙ্গে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা।
শুধু ঝাং নয়, যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রায় চার লাখের মত চীনা শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাদের অস্বস্তি দিন দিন বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার পারদ যত চড়ছে, তারা মনে করছেন তাদের প্রত্যেককেই এখন সন্দেহভাজন চর হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সিএসসি প্রায় ৬৫,০০০ চীনা শিক্ষার্থীকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য বৃত্তি দিয়েছে। এই সংখ্যা বিদেশে মোট চীনা শিক্ষার্থীর সাত শতাংশ। অবশ্য চীনে পড়তে যায় এমন হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীকেও সিএসসি বৃত্তি দেয়।
এমন পরিস্থিতি দেশ দুটির খারাপ সম্পর্কের মূল্য দিতে হাতে পারে আমেরিকায় পড়তে যাওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনা প্রকাশের পর আমেরিকার এমন আচরণ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।