অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। যার ধারাবাহিকতায় স্বর্ণ উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। ২০২৯ সালের মধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণ উত্তোলনকারীর স্বীকৃতি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভস্নাদিমির পুতিনের সরকার। খবর মাইনিংডটকম ও মেটাল বুলেটিন। রাশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলন খাতের এ মহাপরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ সলিউশনস।
সংস্থাটির কান্ট্রি রিস্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে স্বর্ণ উত্তোলন খাতে প্রতি বছর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায় রাশিয়া। এ প্রবৃদ্ধি দেশটিকে বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণ উত্তোলনকারীর স্বীকৃতি এনে দেবে। এতে ২০২৯ সালে চীনকে ছাড়িয়ে তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে উঠবে দেশটি। উত্তোলন খাতের এ প্রবৃদ্ধির পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণের বাড়তি চাহিদা।

ফিচ সলিউশনস বলছে, রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবত আছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইসু্যতে বিরোধে জড়ায় পুতিন প্রশাসন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কে সব সময়ই একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিতে চায় না রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির সরকার। তাই অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত রাখতে কয়েক বছর ধরেই স্বর্ণের মজুত বাড়িয়ে চলেছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ফলে দেশের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা রাশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন বাড়াতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ক্রেমলিনও চাইছে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে। মূলত এ কারণেই ২০২৯ সাল নাগাদ স্বর্ণ উত্তোলন খাতে বছরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে রাশিয়া।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ উত্তোলন করে চীন। শীর্ষ উত্তোলনকারীদের তালিকায় এর পরই রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রাশিয়া রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। স্ট্যাটিস্টার হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীনের খনিগুলো থেকে সব মিলিয়ে ৪২০ টন স্বর্ণ উত্তোলন হয়েছে। এর আগের বছর চীনা উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে ৪০১ টন স্বর্ণ উত্তোলন করেছিল। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে স্বর্ণ উত্তোলন বেড়েছে ১৯ টন।

অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণ উত্তোলন খাতেও গত বছর প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। ২০১৯ সালে দেশটির খনিগুলো থেকে সবমিলিয়ে ৩৩০ টন স্বর্ণ উত্তোলন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্ট্যাটিস্টা। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলীয় উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে ৩১৫ টন স্বর্ণ উত্তোলন করেছিল। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে স্বর্ণ উত্তোলন বেড়েছে ১৫ টন।
তবে শীর্ষ দুই উত্তোলক দেশ চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও ২০১৯ সালে রাশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলন খাতে মন্দাভাব দেখা গেছে। স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাশিয়ার খনিগুলো থেকে সব মিলিয়ে ৩১০ টন স্বর্ণ উত্তোলন হয়েছে। এর আগের বছরে দেশটিতে মোট ৩১১ টন স্বর্ণ উত্তোলন হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন এক টন কমেছে।
আগের বছরের মন্দা ভাব ও চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর ধাক্কার পরও আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণ উত্তোলন খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে রাশিয়া।