প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকারের দেওয়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। একই সময়ে করোনা সংকটের কারণেও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আসছে বেশি ঋণ। কমেছে আমদানি দায় পরিশোধের চাপ। এসব কারণে গত তিন মাস ধরেই নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এক মাসের ব্যবধানে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি যুক্ত হয়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড হয়েছে রিজার্ভে। রেকর্ড হয়েছে প্রবাসী আয়েও। জুলাই মাসের ২৭ দিনে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে আটকে ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এরপর মে মাসে ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও জুন মাস শেষে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড তৈরি হয় রিজার্ভে। আর এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে গতকাল রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের জুনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, করোনাভাইরাস মহামারীর চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের মাত্র ২৭ দিনেই ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুন মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি মাস শেষে এটি আড়াই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং মে মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের সময়োপযোগী ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে তা দিয়ে প্রায় আট মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বিশ^ব্যাপী করোনা সংকটের মধ্যে গত মে মাসেও প্রবাসীরা ১৫০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। আর গত ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। করোনা সংকটের মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা দেশের প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভেও রেকর্ড হচ্ছে।

সম্প্রতি রেমিট্যান্সে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীরা যেন সহজে পান সে জন্য বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রণোদনায় কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগত না। এখন এর আওতা বাড়ানো হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সে বিনা শর্তে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হবে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। এতদিন প্রণোদনা পেতে হলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রাপক ওঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন তা বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে। দেশ রূপান্তর