১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি সঞ্জয়ের জন্ম বেঙ্গালুরুতে। পাঁচ ভাই এবং দুই বোনের সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওঠা উদ্যাননগরীতে। তাঁর আগে পরিবারের অভিনয়ের ধারা ছিল না। সঞ্জয়ের প্রজন্ম থেকে পরিবারে বড় ভূমিকা পালন করে ফিল্মি আবহ। ছবিতে অভিনয় করবেন বলে স্কুলের পরে আর পড়াশোনা করেননি সঞ্জয়। দিল্লির স্কুল থেকে পড়াশোনার পরে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে সঞ্জয় পাড়ি দেন মুম্বাই।
১৯৬২ সালে সঞ্জয় বলিউডে কাজ শুরু করেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। ‘টারজান গোজ টু ইন্ডিয়া’ ছবিতে তিনি ছিলেন জন গিলারম্যানের সহকারী। অভিনেতা সঞ্জয়কে প্রথম দেখা যায় ১৯৬৪ সালে, চেতন আনন্দের ‘হকীকত’ ছবিতে। এর পর ব্লকবাস্টর ছবি ‘দোস্তি’-তে তিনি অভিনয় করেছিলেন গুরুত্বপূ্র্ণ পার্শ্ব চরিত্রে। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবির মধ্যে রয়েছে ‘এক ফুল দো মালি’, ‘দশ লাখ’, ‘ইন্তেকাম’, ‘ঢুনঢ’, ‘মেলা’ এবং ‘নাগিন’। কিন্তু নায়ক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি পাননি তিনি।
অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী নায়কদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে অভিনয় থেকে সরে যান তিনি। সত্তরের দশকের শেষে পরিচালনায় পা রাখেন সঞ্জয় খান। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালনায় ‘চাঁদি সোনা’। আশির দশকে ‘আবদুল্লাহ’ ছবিটির পরিচালক ছিলেন তিনি। তাঁর পরিচালনায় শেষ ছবি ‘কালা ধন্ধা গোরে লোগ’ মুক্তি পায় ১৯৮৬তে। কিন্তু পরিচালক হিসেবেও অধরাই থেকে গেল সাফল্য। আশির দশকের শেষে সঞ্জয় সরে আসেন দূরদর্শনে। বড় পর্দার তুলনায় ছোট পর্দায় তাঁর সাফল্য ও জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। দূরদর্শনে তাঁর কাজ ছিল পুরাণ ও ইতিহাস নির্ভর। ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’, ‘দ্য গ্রেট মরাঠা’, ‘জয় হনুমান’, ‘১৮৫৭ ক্রান্তি’, ‘মহারথী কর্ণ’ হল ছোট পর্দায় সঞ্জয়ের উল্লেখযোগ্য কাজ। টেলিভিশনে এই সিরিজগুলির প্রত্যেকটির প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন সঞ্জয়। ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’-এ তিনি ছিলেন মূল চরিত্র রূপায়ণেও।
দর্শকদের পছন্দের প্রথম সারিতে ছিল টিপুর জীবনআখ্যান। কিন্তু এই সিরিয়ালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ১৯৮৯ সালে মাইসুরুতে এই সিরিয়ালের সেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে টেকনিশিয়ান ও অভিনেতা মিলিয়ে মারা যান অন্তত ৫২ জন। পরিচালক সঞ্জয় নিজে মারাত্মক আহত হন অগ্নিকাণ্ডে। ১৩ মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে ৭৩টি অস্ত্রোপচার সহ্য করতে হয় তাঁকে। আশঙ্কা ছিল, এই ধারাবাহিকের কাজ হয়তো অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। কিন্তু সেই আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করেন সঞ্জয়। অস্ত্রোপচারের পরে কার্যত নতুন জীবন পেয়ে পূর্ণ উদ্যমে ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেন পরিচালক। টিপু সুলতানের ভূমিকায় তাঁর অভিনয়ও মন কেড়েছিল দর্শকদের। সঞ্জয় খানের বাকি ভাইদের মধ্যে ফিরোজ খান বলিউডের সফল নায়কদের মধ্য এক জন। জনপ্রিয়তার নিরিখে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয়কেও। আর এক ভাই আকবর খানও বলিউডের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৬ সালে সঞ্জয় বিয়ে করেন জারিন খানকে। তাঁদের তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়ে ফারহা এবং সিমোন বলিউডে পরিচিত নন। ছোট মেয়ে সুজান বিয়ে করেছিলেন হৃতিক রোশনকে। কিন্তু ২০১৪-এ ভেঙে যায় হৃতিক-সুজানের ১৪ বছরের দাম্পত্য।
বলিউডের পাওয়ার কাপল হিসেবে পরিচিত হৃতিক-সুজানের বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায় নি। দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে যান সুজান। তবে ছেলেদের স্বার্থে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছন তাঁরা। সঞ্জয়ের ছেলে জায়েদ খানও অভিনয় শুরু করেছিলেন। ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’, ‘ম্যায়ঁ হুঁ না’, ‘শব্দ’, ‘দশ’, ‘যুবরাজ’-সহ বেশি কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি ।
বলিউড থেকে দূরে সরে সঞ্জয় এখন ব্যস্ত হোটেল ব্যবসা নিয়ে। বেঙ্গালুরুতে তাঁর বিলাসবহুল হোটেল এবং স্পা-এর অন্দরসজ্জা করেছেন স্ত্রী জারিন খান। পাশাপাশি লিখছেন আত্মজীবনীও। বইয়ের জন্য নাম ভেবেছেন ‘দ্য বেস্ট মিসটেকস অব মাই লাইফ’।