প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহারে মিথ্যা তথ্য ও জাল ব্যাংক বিবরণী দাখিলের দায়ে কাট্টালী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ছয় পরিচালককে মোট সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এছাড়া কাশেম ড্রাইসেলের শেয়ারে কারসাজির দায়ে আরও চার প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। গতকাল কমিশনের নিয়মিত সভায় জালিয়াতি ও কারসাজির দায়ের ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে চার বছর আগে কাশেম ড্রাইসেলের শেয়ারে কারসাজি করে চার প্রতিষ্ঠান। কারসাজির ঘটনা প্রমাণিত হলেও ড. খায়রুল হোসেনের কমিশন শাস্তি না দিয়ে তা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে। তবে মে মাসে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে কমিশন গঠনের পর শাস্তির অপেক্ষায় থাকা ১৩১টি ঘটনা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে শিবলী কমিশন। নবগঠিত কমিশন তাদের প্রথম দিন সভায় ৩৬টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করে। গতকালের কমিশন সভায়ও দুটি ঘটনায় বড় অঙ্কের জরিমানার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে অভিহিত মূল্যে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কাট্টালী টেক্সটাইলস লিমিটেড। সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণে ভবন নির্মাণ ও নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন, জেনারেটর ক্রয় ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। চলতি বছরের অক্টোবরে তা সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের যথাযথ ব্যবহার করেনি। আবার অর্থ উত্তোলনের কিছুদিন পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনে মিথ্যা তথ্য ও জাল ব্যাংক বিবরণী দাখিল করা হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ১৮ ধারা লঙ্ঘন করেছে।
আইপিওর অর্থ ব্যবহারে মিথ্যা তথ্য ও জাল ব্যাংক বিবরণী প্রদানের দায়ে গতকাল কাট্টালী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এমদাদুল হক চৌধুরীকে এক কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এছাড়া এই কোম্পানির চেয়ারম্যান নাসরীন হক, পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক চৌধুরী, মো. মোকাররম আনোয়ার চৌধুরী, ওয়াদুদা সাবরিনা ও সিফাত সাবরিনাকে পৃথকভাবে ৫০ লাখ টাকা করে মোট আড়াই কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সব মিলিয়ে এ কোম্পানির এমডিসহ মোট ছয় পরিচালককে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে সাড়ে চার বছর আগের কারসাজির ঘটনায় গতকাল চার প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে কাশেম ড্রাইসেলের শেয়ার ৬৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৩১ টাকা ৭০ পয়সায় উন্নীত করে বড় অঙ্কের মুনাফা করে চার প্রতিষ্ঠান। খায়রুল কমিশন কারসাজিকারকদের শাস্তি না দিয়ে দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। তবে নবগঠিত কমিশন গতকাল ওই শেয়ারে কারসাজির দায়ে নারায়ণ চন্দ্র পাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ৩ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এই কোম্পানির শেয়ারের কারসাজির দায়ে প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজকে দেড় কোটি টাকা, সোলায়মান রুবেল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ১০ লাখ টাকা ও মো. মাহমুদুজ্জামান অ্যান্ড মো. মাহিবুল ইসলামকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়াও গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি, ৫ লাখ টাকার বেশি নগদে নেওয়াসহ বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে এসআইবিএল সিকিউরিটিজ, কাইউম সিকিউরিটিজ, প্রিমিয়ার লিজিং সিকিউরিটিজ ব্রোকিং লিমিটেড, লতিফ সিকিউরিটিজ, এসআর ক্যাপিটাল, রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিসেস ও এসিই ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসকে সতর্ক করেছে এসইসি।
নিউজ: দেশ রুপান্তর