কক্সবাজার উপকূলের পাঁচটি উপজেলায় লবণ উৎপাদনের ২০১৯-২০ মৌসুম শেষ হয়েছে। এ মৌসুমে সব মিলিয়ে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এবার লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টন কম লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই মৌসুমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দাম কমতির দিকে থাকায় অনেক চাষি এর মধ্যে লোকসানের মুখে লবণ চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে মৌসুম শেষ হলেও লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে রয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। ফলে আগামী দিনগুলোয় দেশে লবণের দাম নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, গত এক দশক ধরে প্রতি মৌসুমেই লবণ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আসছেন চাষিরা। তবে এবার মৌসুম শেষে ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৮৩ হাজার টন। এরপর ৯ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টনে। গত মৌসুমে চাষিরা ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ, যা লক্ষ্যের তুলনায় বেশি।

কক্সবাজারের লবণচাষিরা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লবণের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এলে মার্চের শেষ দিকে মাঠ থেকে উঠে যান অনেক কৃষক। দাম বৃদ্ধির আশায় অনেকে খোলা মাঠে লবণ মজুত করলেও বর্ষা মৌসুম চলে আসায় মাটির নিচে লবণ রাখার সময় চলে এসেছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লবণ মজুতের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি উৎপাদিত লবণে অন্তত ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আগে কম দামে লবণ বিক্রি করায় লোকসানে থাকা কৃষকের কাছে এখন আর নগদ না থাকায় পণ্যটি মজুত করতে পারছেন না কক্সবাজারের প্রায় ২৮ হাজার লবণচাষি।
লবণচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়া, যানবাহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং কারখানা থেকে লবণের চাহিদা কমে যাওয়ায় দামে অস্বাভাবিক পতন হয়েছে। এতে করে সংকটে পড়েছে লবণ খাত। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর ঘাটতি কাটানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন চাষিরা। তাদের মতে, মার্চেই অধিকাংশ চাষি মাঠ ছেড়ে উঠে গেছেন।
এর মধ্যে এপ্রিলে বৃষ্টির কারণে অনেকের প্রস্তুত মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। সামনে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট থাকবে। সব মিলিয়ে এবার দেশের লবণচাষিরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন
