ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫, ৮:১৩ অপরাহ্ন

কেমন হবে করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ : ইকোনোমিস্ট

ঘনবসতি, স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা, স্বাস্থ্যসেবায় ভারসাম্যহীন ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশকেই করোনাভাইরাস মহামারি সবচেয়ে খারাপ ঝুঁকিতে ফেলেছে। এই মহামারি প্রতিরোধে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক হবে। এমন মন্তব্য করেছে ব্রিটেনভিত্তিক বিখ্যাত ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এ অবস্থায় ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, প্রতিটি দেশই আর্থিক খাতকে বাঁচাতে পদক্ষেপ দেবে। দেবে আর্থিক প্রণোদনা। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এই পদক্ষেপ বিভিন্ন রকম হতে পারে। এ অবস্থায় এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৩ শতাংশ। কিন্তু আগেভাগে এটা সাড়ে ৭ ভাগ প্রত্যাশা করা হয়েছিল। বিশ^জুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও তাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বসে পড়ার বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট। তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে তুলনামূলক বেশি প্রণোদনা সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রণোদনার ধরন কিছুটা সীমিত হবে।

বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট আশঙ্কা করছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ অঞ্চলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি অনেকই কমবে। জনগণের চলাচল কমাতে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় একটা বড় ধাক্কা লেগেছে চাহিদার দিক দিয়ে—এতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেরই প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। এরপর কারখানা ও ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর গিয়ে পড়েছে আরেকটি ধাক্কা। পরে যা চাহিদার ওপর আরেক ধরনের ধাক্কা দেবে। বিশ্বজুড়ে একই পদক্ষেপ নেওয়ায় তা রপ্তানি চাহিদাও সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে। ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা আনার জন্য ও চাহিদা কমে যাওয়ায় পর্যটক আগমন বন্ধ করে দিয়েছে। ভোক্তার পক্ষ থেকে চাহিদা কমে যাওয়া, সেই সঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়ায় নিয়মিত ব্যবসায়িক আয় কমবে। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না এবং বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা ছিল, তা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ও সরকারপ্রধানেরা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটাতে বিভিন্ন পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করছে। তবে এসব পদক্ষেপে অর্থনৈতিক ক্ষতি খুব বেশি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদের সুদহার কমিয়েছে এবং আর্থিক খাতে তারল্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সরকার প্রাথমিকভাবে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য আর্থিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার, যা দেশটির মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। পাকিস্তান ঘোষণা করেছে ৭১০ কোটি ডলারের পুনরুদ্ধার প্যাকেজ, যা দেশটির মোট জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার ৬০ কোটি ডলারের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

পুনরুদ্ধার পদক্ষেপ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারবে না
সংকট আরও বাড়লে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সরকারকে হয়তো আর্থিক প্যাকেজের আকার বাড়াতে হবে। রাজস্ববিষয়ক প্রণোদনাগুলো সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে নগদ স্থানান্তর ও কর মওকুফ—এমন পদক্ষেপ হয়ে থাকে। অন্যদিকে আর্থিক প্রণোদনা সাধারণত ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা এবং বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে নজর দেয়। যা–ই হোক, কোন দেশ কতটুকু প্রণোদনা বাড়াতে পারবে, তা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করবে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, এ জটিল অবস্থায় চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ, যা আগে ৬ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। কোনো প্রবৃদ্ধিই হবে না দেশটিতে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ, যা আগে সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করছে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ