প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব

14

করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের গতিও কমে আসছে। ইতিমধ্যেই সাপ্তাহিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি-রপ্তানি খাতের পর প্রবাসী আয়ের এই ধাক্কা কোন দিকে মোড় নেবে সে সম্পর্কে কেউই কিছু বলতে পারছে না।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসীরা প্রায় ৩৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান। দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৪২ কোটি ডলারে। তবে তৃতীয় সপ্তাহে সেটি কমে ২৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১০৭ কোটি ডলার। এতে পুরো মার্চ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার অতিক্রম হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু মার্চ মাসই নয়, সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশে যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে, তার সবগুলোতেই ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। ফলে সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।

বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার, ইতালি, বাহরাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান ও জার্মানি থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু এই ১৫ দেশের কোনোটিই করোনা ভাইরাসমুক্ত নয়। এমনকি এর মধ্যে কোন কোন দেশ করোনার থাবায় মারাত্মক মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সে এই প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে এ জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এসংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করে। আর ২ অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তাৎক্ষণিক ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে তার আগের মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছিল। তবে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে তার আগের মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। জানুয়ারি মাসে প্রায় ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৪৫ কোটি ডলার। যদিও এটি গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ছিল। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে প্রায় এক হাজার ২৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।