ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫, ৬:২৯ অপরাহ্ন

শ্রমিক-পরিবহন সংকটে ভারতে নিত্যপণ্য সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত

mousqe

ভারতের সিংহভাগ বাজারে সবজি, ভোজ্যতেল, শস্য ও ডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবেশক ও আমদানিকারকদের। মূলত নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গৃহীত পদক্ষেপে শ্রমিক সংকট বা পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক অবস্থায় না থাকায় এসব পণ্য সরবরাহে বড় ব্যাঘাত দেখা দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকলে পণ্য ঘাটতি একটি বড় সংকট আকারে হাজির হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ভারতের অর্থনৈতিক কেন্দ্র মুম্বাইয়ে গত কয়েক দিনে শস্যের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে দৈনিক ৩০ কেজির ওজনের এক লাখ বস্তায় দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশের বহু রাজ্যে অবরুদ্ধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পর পণ্য পরিবহন নিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে। তবে পরিবহনসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে শস্য বহন করে আনা সম্ভব। কারণ ফিরতি যাত্রায় কোনো পণ্য না থাকলে গাড়ি সরবরাহের কাজে ব্যবহূত হয়েছিল তার কোনো প্রমাণ থাকে না। এতে কর্তৃপক্ষ ট্রাকগুলো আটকে রাখতে পারে। কিন্তু পরিবহনসংশ্লিষ্টরা যথেষ্টসংখ্যক চালক না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। এদিকে মুম্বাইয়ের পাইকারি বাজারে ১০ দিনের শস্য মজুদ রয়েছে। মজুদ শেষের আগেই পরিবহন সমস্যার সমাধান ঘটবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন।

নাভি মুম্বাইয়ের শস্য বাজারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে শ্রমিকদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। টানা দুইদিন ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। নাভি মুম্বাইর এপিএমসির পরিচালক নীলেশ ভেরা বলেন, শ্রমিক পাওয়াটাই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য আমরা সরকারের কাছে যথেষ্ট স্যানিটাইজার ও মাস্ক চেয়েছি। কিন্তু শ্রমিকদের ফিরে আসার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না।

নতুন মুম্বাইর সবজি বাজারের এক প্রতিনিধি জানান, আজকে বাজার খোলার কথা থাকলেও শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু কারণে রাস্তার খুচরা সবজি বিক্রেতাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাঘাত তৈরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাইকারি বাজারে প্রচুর মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য নিয়ে যাবে এখন তিনি সে অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য পর্যায়ে সরবরাহ ও বিতরণে ব্যাঘাত বড় সমস্যা আকারে হাজির হয়েছে।

ভারতে এ মুহূর্তে ডালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। কিন্তু বেশকিছু ডালকল শ্রমিক সংকট ও পরিবহন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। সরকারি কোটা অনুযায়ী আমদানি করা ডাল এসে পৌঁছালেও ছাড়পত্রের অপেক্ষায় কাস্টমসে পড়ে আছে। এক আমদানিকারক জানান, এখন পর্যন্ত যা মজুদ রয়েছে, তা বিতরণ করা হয়নি। শুল্ক বিভাগ পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে না পারায় সমস্যা কেবল বেড়েই চলেছে।

দেশটির আটাকলগুলোয় একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক মিলমালিক জানান, এফএমসিজি আটার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি প্যাকিং সামগ্রীর ঘাটতি থাকায় আটা বিক্রি করতে পারছে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকিং সামগ্রীকেও প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে দেখতে হবে।

প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের তিন-চতুর্থাংশই আমদানি করে ভারত। কিন্তু ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়নের কারণে গত কয়েক সপ্তাহে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চমূল্য বা সরবরাহের ব্যাঘাতের কারণে পণ্যটির চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা পরিবহনের অনুমোদন দিচ্ছে না বলে বেশকিছু খাত থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আসা জাহাজগুলোর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পণ্য বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি বন্দরে ছাড়পত্রের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় সরবরাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ