প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) তহবিল দিয়ে নিজেদের টেক্সটাইল প্রকল্পে কারখানার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন (বিএমআরই) সম্পন্ন করেছে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এর মাধ্যমে সেখানে একটি নতুন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এরই মধ্যে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল নতুন ইউনিটটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে কোম্পানিটি। এতে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা আগের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কারখানার বিএমআরই ও নতুন তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পুঁজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে রিজেন্ট টেক্সটাইল। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর আইপিওর অর্থ ব্যবহারের অনুমতি পায় কোম্পানিটি। আইপিওর অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা অনুসারে বিএমআরই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকা। এ অর্থ আইপিও তহবিল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। আর নতুন তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনে ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৯৬২ টাকা ১৮ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৯ জুনের মধ্যে ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। এর বাইরে আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ হিসেবে ২ কোটি ৬৮ লাখ ১৬ হাজার ৫১৮ টাকা ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইপিও তহবিলের পুরো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। পরে কোম্পানিটি কয়েক দফায় সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করে। সর্বশেষ কোম্পানিটির আইপিও তহবিল ব্যবহারের মেয়াদ দেয়া হয় চলতি মাস (মার্চ) পর্যন্ত।

সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিজেন্ট টেক্সটাইলের আইপিও অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে, বিএমআরই প্রকল্পে ৯ শতাংশ বা ৭ কোটি ৪২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং নতুন তৈরি পোশাক কারখানা প্রকল্পে ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৩৭ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারেনি কোম্পানিটি। সব মিলিয়ে মোট আইপিও তহবিলের ৩৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেনি তারা। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে তারা ৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয় করতে পেরেছে।
সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩০ টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩০ টাকা ৭০ পয়সা।
এদিকে সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রিজেন্ট টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা কমেছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা ৬৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২০ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৪ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৪১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০ টাকা ২০ পয়সা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার রিজেন্ট টেক্সটাইল শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৭ টাকা ৯০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও ১৮ টাকা ৪০ পয়সা।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।