গণপরিবহণ চালুর দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ

24

গণপরিবহণ চালুর দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। দাবি বাস্তবায়নে আগামী রোববার (২ মে) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং মঙ্গলবার (৪ মে) সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও বাস চালুর দাবি জানিয়েছ।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। পরে দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে একই দাবি জানানো হয়েছে।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, লকডাউনে সব কিছু চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এতে এখাতে কর্মরত ৫০ ভাগ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালু করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, বাংলদেশের প্রায় ৭৫ ভাগ যাত্রি ও ৬৫ ভাগ পণ্য সড়ক পথে সড়ক পরিবহন হয়ে থাকে। প্রতিদিন কয়েক কোটি যাত্রি ও পণ্য পরিবহনের কাজে ৫০ লাখ শ্রমিক দিনরাত কাজ করে থাকে। পরিবহন শ্রমিকরা গণমানুষের সংস্পর্শে থাকায় তারা যেমন সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে তেমনি যাত্রীরাও ঝুঁকিতে থাকেন। সেই বিবেচনায় গণপরিবহন বন্ধ রাখা যুক্তি সঙ্গত। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের কথাও ভাবা দরকার। জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে জীবিকারও প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা লকডাউন বিরোধিতা করছি না। কথা ছিল লকডাউনের সময় মানুষের চলাচল, শ্রম ঘন শিল্প, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোট-কাচারি সব বন্ধ থাকবে। সেই হিসেবে গণপরিবহণ বন্ধ থাকলে পরিবহন শ্রমিকের কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবকিছু স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার শর্তে লকডাউন শিথিল করায় গার্মেন্টস, শপিংমল, কাঁচা বাজার, অফিস আদালত চলছে।

ওসমান আলী বলেন, বর্তমান লকডাউনের গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করায় ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা উপায়হীন হয়ে পরিবহন সেক্টরের জন্য সরকারের থোক বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

এ অবস্থায় তিন দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।

৩. সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএস’এর চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

এসব দাবি বাস্তবায়নে আগামী ২ মে (রবিবার) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং ৪ মে মঙ্গলবার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণাও দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সহ সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু। শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ ছদু, মফিজুল হক, হুমায়ুন কবির খান, আব্বাস উদ্দিন বেপু প্রমুখ।

বাস চালুর দাবি মালিক সমিতির

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, লকডাউনে বাস ছাড়া সবই চলছে। বাস চালু না থাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিকল্পভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু, থ্রি-হুইলার, মাইক্রোবাস, স্টাফ বাস, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেও গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বরং স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়ছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে সিটের অর্ধেক যাত্রী, তথা ২ সিটে ১ জন যাত্রী নিয়ে বাস চালু থাকলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে না।

তারা আরও বলেন, বাস চালুর ব্যাপারে সারাদেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাস চালুর দাবিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ ও বিক্ষোভ চলছে। লাখ লাখ শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় পড়ে আছে। বহু গরিব মালিক ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অসহায় জীবন-যাপন করছে।

এসব দিক বিবেচনা করে কর্মহীন শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সহযোগিতা প্রদানসহ বাস চালু করার জন্য সারাদেশের মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।