ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই

11

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ আর নেই(ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বিএনপির এ নেতার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, ‘মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মৃত্যুবরণ করেন।’

রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে মওদুদকে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাসের চিকিৎসা শেষে ২৯ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন এই রাজনীতিক। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।সেখানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মওদুদ আহমদের চলে যাওয়া শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, তিনি একজন খ্যাতনামা আইনজীবী এবং উঁচু মানের লেখক ছিলেন। মওদুদ আহমদ বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (মওদুদ আহমদ) এই চলে যাওয়ায় আমরা শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

মওদুদ আহমদের জন্ম নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ১৯৪০ সালের ২৪ মে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

দেশে ফিরে বেছে নেন আইন পেশা। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মওদুদের। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

বৈচিত্র্যময় এক রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল মওদুদের, বিভিন্ন সময়ে হয়েছেন বিতর্কিতও। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বিএনপির টিকিটে ১৯৭৯ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।

১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হলে এক বছরের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতেও নাম লেখান মওদুদ। ১৯৮৫ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

১৯৮৬ সালে তাকে আবারও উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হন মওদুদ। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং পরে তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন এরশাদ।

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় এরশাদকে। এরপর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মওদুদ।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মওদুদ আহমদ বিএনপিতে ফিরে আসেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে পঞ্চমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবারই মওদুদ আহমদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে এমপি নির্বাচিত হন।

রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের লেখক মওদুদ আহমদ। রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে বাঁক বদল করলেও লেখালেখিতে তিনি ইতিহাসনিষ্ঠ থেকেছেন বলে প্রশংসা রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জে শোকের ছায়া

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, নোয়াখালী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও নোয়াখালীর কৃতি সন্তান ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ (৮২) মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, ১ মেয়েসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার নোয়াখালীর মৃত্যুতে কোম্পানীগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে এলাকাবাসী এক প্রতিক্রিয়ায় জানাই, নোয়াখালী হারিয়েছে এক কৃতিসন্তানকে, কোম্পানীগঞ্জ হারিয়েছে এক গর্বিত সন্তানকে। তার অভাব কখনও পূরণ হবার নয়। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের নামাজের জানাযার সময়সূচী পরবর্তীতে নির্ধারণ করে জানানো হবে বলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি/সেক্রেটারী সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, মওদুদ আহম্মদের মৃত্যুতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রিপন গভীর শোক প্রকাশ করে তার বিদাহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।